সেলিম মাহবুব,সিলেট:
ছাতকের দোলারবাজার ইউনিয়নের জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিকের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। কিন্ত কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে প্রধান শিক্ষকের পোষ্য একটি বাহিনী।
হামলায় আহত হয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্থানীয়দের দাবি প্রধান শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায়।এক প্রধান শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়টি ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে।খোজ নিয়ে জানাগেছে জাহিদ পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আব্দুল মালিক স্ব-পরিবারে সিলেটে বসবাস করেন। প্রায় সারা মাসই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন।
মাসে ২-৪ দিন এসে বেতন ভাতার ব্যবস্থা করে থাকেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের কোন যোগ্যতা নেই অথচ তিনিই গায়ের জোরে প্রধান শিক্ষক। জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ.এস.সি পাশ। ফলে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক তার অধীনে চাকুরী করতে চান না। প্রধান শিক্ষক স্থানীয় হওয়ায় কারণে তার আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকৃত মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি হতে বঞ্চিত করে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গোপন মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে অনেক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।
এ প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিজ লোক দিয়ে কমিটি গঠন এবং বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসেব কেউ চাইতে পারেনা।বিদ্যালয় স্থাপনের পর থেকে এ পর্যন্ত কোন কমিটির নিকট বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের হিসাব দেননি তিনি। তিনি বিদ্যালয়ের যাবতীয় বেতন, টিউশন ফি নিজের মতো ভোগ করে যাচ্ছেন এবং সকল প্রকার নিয়োগ হতে নিয়োগ বাণিজ্যে করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রধান শিক্ষক।
একজন অফিস সহকারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে সভাপতির সাথে দ্বন্দ্বের জেরে ৮ মাস সকল শিক্ষকদের বেতনভাতা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ইতিপূর্বে বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ ১০ মাস বিচ্ছিন্ন ছিল। ২০২২ সালে ১৭ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশ পত্রে জন্ম তারিখ ও নাম ভুলের কারণে তারা ঝরে পড়ে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীর এসব ভুল পরিলক্ষিত হলে এ নিয়ে সংশোধন বাণিজ্য ও করেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জাহিদপুর গ্রামের মৃত আফরোজ আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল মালিককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয় অস্থায়ী ভাবে।
পরে তিনি বিভিন্ন জাল জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরী পাকাপোক্ত করেছেন। দায়িত্বের প্রথম থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাত, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মতামত বর্হিভূতভাবে একক সিদ্ধান্তে কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছেন। এনিয়ে তার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে একাধিকবার মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিত ২০২৩ সালের ১৩ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের এক স্মারকে (নং-০৫.৪৬.৯০৩০.০০০.০১.০০১.১৯-৯৮৩) তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মারকে (নং-জাতীঃবিঃ/পরীঃ/সনদ/৪৪৯/২০০৫/ ৭৩৪৮) তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ (পাস) সার্টিফিকেট জাল প্রমাণিত হয়। তার সার্টিফিকেট জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত দায়েরি এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও তিনি জোরপূর্বক প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক মো.আব্দুল মালিকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।এ সময় শিক্ষক আব্দুল মালিকের নির্দেশে বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের গুরতর জখম করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ও পথচারীসহ ১৫ জন লোক আহত হয়। গুরুতর আহত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জুবায়েল (১৫), সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিমা আক্তার লিজা (১৪), পথচারী মরতুজ আলী (৬৫) কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় পর পৃথক-পৃথক সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাতক সেনাবাহিনী ক্যাম্প, ছাতক থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের লেখা পড়া যাতে বিঘ্নিত না হয় সে লক্ষে এলাকাবাসীর এক রেজুলেশনের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোস্তফা মুন্না সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিলেও ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে বসতে দেয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি পদত্যাগ না পর্যন্ত তারা ক্লাস বর্জন অব্যাহত রাখবে। প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে এখন এলাকার শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাধারণ জনতা সোচ্ছার হয়েছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করে বিদ্যালয়ের পাঠদান সচল করার জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবরে লিখিত আবেদন করেন জাহিদপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুর, ভাওয়াল, আলমপুর, গোপিনাথপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও অভিভাবকগণ। এব্যপারে জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালিকের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি মোবাইল বিচ্ছিন্ন করে দেন। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আই সিটি) সমর কুমার পাল অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তপূর্বক দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।##