কাজী সামছুজ্জোহা মিলন মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
২৯ মে ২০২৪
নওগাঁর মহাদেবপুরে ভূয়া এতিমখানা খুলে ভূয়া শিক্ষার্থীদের নাম দিয়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি অনুদান উত্তোলন করে সম্পূর্ণই আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও সংশ্লিষ্টরা এর বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কর্তৃপক্ষ বলছেন এতিম না থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে।
উপজেলা সদরের হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন আত্রাই নদীর বাঁধের উপর গিয়ে দেখা যায়, একটি ভবনে মোট তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলছে। এর একটি অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, একটি রাবেয়া নুরানী হাফেজিয়া ও মডেল এবতেদায়ী (স্বতন্ত্র) মাদ্রাসা এবং অপরটি রাবেয়া এছাহাক বেসরকারি শিশু সদন। কিন্তু তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী একই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেয়া হয়েছে। তাদের জন্য উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর থেকে প্রতিমাসে ৮৫০ টাকা করে ভাতা ওঠে। এছাড়া এই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের সরকারি ও বেসরকারি অনুদান পাওয়া যায়। কিন্তু মাদ্রাসায় যে কয়জন শিক্ষার্থী রয়েছে সকলেই মাদ্রাসার নিয়মানুযায়ী মাসিক বেতন, থাকা ও খাওয়া বাবদ নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে যে, যেসব দু:স্থ শিক্ষার্থী সময়মত টাকা দিতে না পারে তাদেরকে এই প্রতিষ্ঠানে এমনকি মালিকের বাসায়ও কাজ করতে হয়। এখানকার এতিমখানায় ৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাদের নাম জমা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, এসব নাম ভূয়া। বিধি অনুযায়ী এখানে প্রতিদিন ৯০ জন দু:স্থ এতিমের জন্য বিনামূল্যে রান্না হবার কথা। এদের থাকা, খাওয়া ও লেখাপড়ার বেতন ফ্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এই ৯০ জনের মধ্যে একজনেরও কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এদের থাকার জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থাও নেই। উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর থেকে এই ৯০ জনের অর্ধেক ৪৫ জনের নামে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে প্রতিবছর ১০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করে সম্পূর্ণই আত্মসাৎ করা হয়। গতবছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এই এতিমদের নামে মোট পাঁচ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। তার আগে মোট একশ’ জন শিক্ষার্থী দেখিয়ে ৫০ জনের নামে বরাদ্দ উত্তোলন করা হতো। গতবছর কর্তৃপক্ষ এই বরাদ্দ পাঁচজন কমিয়ে ৪৫ জন করে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এতিমদের দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষিকা জানান, এটা মহিলা মাদ্রাসা। এখানে পুরুষদের ঢোকা নিষেধ। তাদের দেখানাও যাবেনা। ওই শিক্ষিকা জানান, মাদ্রাসার ছাত্রীরাই এতিম। কিন্তু এমিতখানা ভিন্নভাবে নেই। এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা উপজেলা সদরের মৃত এছাহাক আলীর ছেলে ওবায়দুল হক বাচ্চুও একই কথা জানান। তিনি জানান, এতিমখানার রেজিষ্ট্রারে এতিমদের নামের তালিকা রয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন বদলগাছী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাজিব আহমেদ। জানতে চাইলে মোবাইলফোনে তিনি জানান, তদন্ত করে এতিম পাওয়া না গেলে প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।###