বার্তা সম্পাদক:- নিরেন দাস
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার চরে বাদামগাছ প্রচণ্ড রোদের কারণে শুকিয়ে গেছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার চরে বাদামগাছ প্রচণ্ড রোদের কারণে শুকিয়ে গেছে।
চলমান তাপপ্রবাহে নরসিংদীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। টানা রোদে পুড়ে যাচ্ছে গাছ। ঝরে পড়ছে লিচু, আম, লটকনসহ অপরিপক্ব মৌসুমি ফল।অন্যদিকে কুষ্টিয়ায় পুড়ে গেছে চরাঞ্চলের বাদামের খেত। ব্যাহত হচ্ছে পাট, মরিচ ও ধানের চাষ। জমিতে সেচ দেওয়া হলেও প্রচণ্ড রোদের তেজে পানি বেশিক্ষণ থাকছে না।
নরসিংদীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচণ্ড রোদে জমি শুকিয়ে যাওয়ায় নেতিয়ে পড়ছে সবজিগাছ, ঝড়ে যাচ্ছে ফুল ও অপরিপক্ব ফসল। এ ছাড়া তাপে মৌসুমি ফল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। একইভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পানের বরজ। বেলাব উপজেলার ধুকুন্দি গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেগুন, শসাসহ বিভিন্ন সবজি চাষের মৌসুম চলছে। এসব ফসলে প্রয়োজনীয় পানিসহ নিয়মিত পরিচর্যার দরকার পড়ে। এখন প্রচণ্ড তাপের কারণে জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া রোদে পুড়ে নেতিয়ে পড়ছে গাছগুলো।
মনোহরদী উপজেলার মনতলা গ্রামের পানচাষি এখলাস ও মোখলেস দুই ভাই জানান, কিছুদিন আগে শিলাবৃষ্টিতে অনেক পান ঝরে গেছে। এখন আবার রোদে পান পাতা লাল হয়ে ঝরে যাচ্ছে। আগে প্রতিদিন তাঁরা ৫ হাজার টাকার পান বিক্রি করতেন। এখন তা ২ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
রায়পুরা উপজেলার মরজাল গ্রামের লটকনচাষি কাজী কামাল হোসেন জানান, গরমে লটকন ঝরে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। উত্তর বাখরনগর গ্রামের কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টির অভাবে সবজি খেত শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছগুলো মরে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
এ নিয়ে কথা হলে নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এ সময় শাকসবজি ও ধানের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। বিশেষ করে ধানের জমিতে পানি জমা রাখতে হবে। সবজির চারা দিনের বেলা পলিথিন দিয়ে না ঢেকে রেখে বস্তা, চট বা কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে তাপ না লাগে।
এদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর, রামকৃঞ্চপুর, মরিচা ও চিলমারী ইউনিয়নে পদ্মার চরে বাদামের গাছ প্রচণ্ড রোদের কারণে শুকিয়ে গেছে। প্রকৃতির এমন আচরণে ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। উপজেলার চরাঞ্চলে এবার ৭ শত ২০ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে।
ফিলিপনগরের বাদামচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর বাদামে লাভ হওয়ায়, এবার ৫ বিঘা জমিতে তা চাষ করেছিলাম। রোদে গাছ শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। সেচ ব্যবস্থা না থাকায় গাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’ আরেক বাদামচাষি মানিক হোসেন বলেন, ‘এ বছর ২৬ বিঘায় বাদাম লাগিয়েছি। প্রতি বিঘায় ১৭-১৮ হাজার খরচ হয়েছে।
অতিরিক্ত খরার কারণে প্রায় ৮ বিঘার বাদাম একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। এর মধ্যে বৃষ্টি না হলে বাকি জমির বাদামও নষ্ট হয়ে যাবে।’
তাপপ্রবাহের কারণে নতুন করে ফসলের বীজ বপন করতে পারছেন না চাষিরা। আসারুল ইসলাম নামের এক চাষি বলেন, ‘ভুট্টা কাটার পরে জমিতে পাট আবাদের কথা ছিল। কিন্তু রোদের যে তাপ, এতে সেচ দিয়ে চাষ করা সম্ভব না। প্রয়োজন ভারী বৃষ্টি।’
বিল্লাল হোসেন নামের এক মরিচচাষি জানান, মরিচের চারা লাগানোর পর তিন দিন পরপর জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
যোগাযোগ করা হলে দৌলতপুরের কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের সেচের মাধ্যমে চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে হয়তো চাষিদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কৃষিতে স্বস্তির সম্ভাবনা দেখছি না।’