October 12, 2024, 3:11 pm
শিরোনাম :
ছাতকে নামাজি শিশুদের  মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণ করলেন লতিফিয়া স্টুডেন্ট ও যুব ফোরাম বিশ্ব নবীকে নিয়ে কটুক্তি। মধুপুরে পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য স্বপন ফকির মেহেরপুরে পরিবেশক ঐক্যের বনভোজন অনুষ্ঠিত রাজশাহীর বাঘায় পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব শ্রী রথীন্দ্রনাথ দত্ত।  নড়াইল পহরডাঙ্গা বিএনপি মতবিনিময় সভা লোহাগড়া থানা কর্তৃক ১৩ (তের) জন আসামি গ্রেফতার শ্রীমঙ্গলে মহা অষ্ঠমীতে কুমারী পূজা, হাজারো দর্শণার্থীর ভিড় মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলায় এক হাজার তিনটি পূজামন্ডপে মহা সপ্তমী পূজা পালন হচ্ছে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো।রহিম বাদশার।দুর্গাপূজার উপহার সামগ্রী বিতরণ।

প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর।

সামছুল আলম দুদু এমপি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ছয় দিনের থাইল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, থাইল্যান্ড সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সময়ের মাপকাঠিতে তাত্পর্যপূর্ণও বটে। টানা চার দফায় নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পাঁচ বারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। রাজনীতির উত্তাল ঢেউ ও বন্ধুর পথপরিক্রমায় তিনি নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। চতুর্থ দফা প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে মাত্র চার মাসের মধ্যে দুইটি আন্তর্জাতিক সফর অত্যন্ত তাত্পর্য বহন করে।

গত ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জার্মানি মিউনিখ সম্মেলনে অংশ নেন। সেটি ছিল একটি নিরাপত্তাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সফর করেন। ১৯৭২ সালে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা হিসেবে এটিই প্রথম সফর। প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভিনন্দন ও অভ্যর্থনা জানানো হয়। সফরের প্রথম দিনে বিমান বন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় বিরল সম্মান। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। দুই নেতার একান্ত বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়। বৈঠকে নিজ নিজ দেশের পক্ষে দুই প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব দেন। দুই নেতার উপস্থিতিতে পাঁচটি বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক স্বাক্ষর হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় নথি একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এম ও ইউ) ও একটি লেটার অব ইনটেন্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের বন্ধুত্ব, আমাদের ঐতিহাসিক ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে গ্রথিত। সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ উভয় নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।

আলোচনা প্রসঙ্গে উভয়ে একমত পোষণ করেন যে, আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের স্বার্থে একে অন্যের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে থাইল্যান্ডের বন্ধুত্বকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করেন উভয় নেতা। জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চিকিত্সা খাতে তথা অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। তাছাড়া একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কথাও আলোচনা হয়। খুব শিগিগরই এ ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া বাংলাদেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্যও বিনিয়োগ আহ্বান করা হয়। বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের উত্তম অংশীদার হতে পারে থাইল্যান্ড, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা।

এই অঞ্চলের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে পরস্পর শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি। থাইল্যান্ড আমাদের খুবই নিকটতম প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র। চিকিত্সাসেবা গ্রহণ ও পর্যটক হিসেবে প্রতি বছর অসংখ্য বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের যাতায়াত করে। থাইল্যান্ডের সঙ্গে রয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত। দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের প্রায় ২২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রিত হয়ে আছে বাংলাদেশে। মানবিক কারণে আমাদের মানবিক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় আশ্রয় লাভ করে। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। এসব শরণার্থীরা এখন বাংলাদেশে নানা রকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের পরিবেশকে নষ্ট করে ফেলছে। এই সব শরণার্থীর প্রত্যাবাসনে জননেত্রী শেখ হাসিনা কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। রোহিঙ্গারা যাতে সসম্মানে নাগরিক মর্যাদায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য থাইল্যান্ডের কৌশলগত সহযোগিতাও প্রয়োজন। থাইল্যান্ড সফরে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপটার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরে থাইল্যান্ড জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে (ইউএনসিসি) এসক্যাপ হলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএ এসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে গত ২৫ এপ্রিল এক যুগান্তকারী ভাষণ দেন। এ ভাষণ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করবে যুগে যুগে। তিনি বিশ্বনেতাদের যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে অসংখ্য নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। তিনি সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার উদার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘নিউ এজেন্ডা ফর পিস কে সমর্থন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার দেওয়া ভাষণে উল্লেখ করেন—‘যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। অহেতুক যুদ্ধ মানবজাতির সভ্যতাকে কলঙ্কিত করে, যা আলোচনায় সমাধানযোগ্য সেখানে যুদ্ধের প্রশ্নই আসা উচিত নয়। অথচ যুদ্ধ চলছে বিভিন্ন দেশে দেশে। প্রাণহানি ঘটছে নিরীহ মানুষ ও অবুঝ শিশুদের। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যেমন যুদ্ধ চলছে, তেমনি কোনো দেশের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক বিরোধ ও যুদ্ধ চলছে। এসব কিছুই আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চল, বিশেষ করে আসিয়ানকে মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, রোহিঙ্গারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে যেন স্থায়ীভাবে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমার থেকেই, সমাধানও তাদের করতে হবে। সমাধানের সুযোগ তাদের হাতেই রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতদিন সমাধান নাগালের বাইরে থাকবে, ততদিন আঞ্চলিক সংযোগ, একীভূতকরণ এবং সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সব প্রচেষ্টা একটি অদেখা ধাঁধা দ্বারা চিহ্নিত হতে থাকবে। আসুন সেই ধাঁধা আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করি।’ প্রধানমন্ত্রী উক্ত ভাষণে আরো বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে এটি এখন বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে ৪০ হাজার শিশু। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। মাদকসেবন পাচার এবং খুন, ছিনতাই, রাহাজানির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এতে পর্যটন শহর কক্সবাজারের সৌন্দর্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।’ উল্লেখ্য, মিয়ানমার সীমান্তে সশস্ত্র সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে। মিয়ানমার সংঘাতে আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। এগুলো সমাধানে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানান বিশ্বনেতাদের। আন্তর্জাতিক এ ফোরামে তিনি মানবিক বিকাশের পথে যা করা উচিত, তিনি তা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জলবায়ু সংকট, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং আন্তঃসীমার দূষণ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের পরও কপ-২৯-এ উচ্চাকাঙ্ক্ষা জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যের জন্য আমাদের চাপ দিতে হবে। আমাদের আন্তঃসীমা পানি ব্যবস্থাপনা এবং বায়ুমানের উন্নতিতে সহযোগিতা করতে হবে। ক্রমবর্ধমান চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।

লেখক :রাজনীতিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা