বার্তা সম্পাদক:- নিরেন দাস
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ঘুষসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২ ই মে) আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলমের বরাবরে সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামের মৃত তাহের উদ্দীন মন্ডলের ছেলে মোঃ মানিক হোসেন ঘুষসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে ওই ভুক্তভোগী মোঃ মানিক হোসেন তার একটি খারীজ বাতিলের জন্য আবেদন করতে গেলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান তার কাছে নগদ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। ওই ভুক্তিভোগী বাধ্য হয়ে তাকে ৫হাজার টাকা ঘুষ দেয়। ওই ভূমি কর্মকর্তা ভুক্তিভোগীর কাছে বাকি ১৫ হাজার টাকা দাবী করেন। বাকি টাকা দিতে না পারায় ভূমি কর্মকর্তা অফিস থেকে ভুক্তিভোগীকে বের করে দেয় ও বলেন আমি আপনার প্রতিবেদন (খারীজ) টাকা ছাড়া পাশ করে দিব না, আপনার যা ক্ষমতা আছে করেন। ওই ভূমি কর্মকর্তা ভুক্তিভোগীর সম্পন্ন ঘুষের টাকা না পেয়ে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন দিয়ে দেন।
জানা যায়, উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়ন চক্রপাড়া ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান যোগদানের পর থেকে সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে নামজারি, দাখিলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন ও ভুক্তিভোগী মানিকের মতো বিভিন্ন সাধারণ মানুষের সাথে এরকম ঘুষ বাণিজ্য এবং খারাপ আচরণ করেই আসছে বলে ওই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ পাওয়া যায়।
ভুক্তিভোগী মোঃ মানিক হোসেন বলেন, আমি গত ১৭ জানুয়ারী২৪ তারিখে একটি খারীজ বাতিলের জন্য সোনামুখী ইউনিয়ন চক্রপাড়া ভূমি অফিসে আবেদন করি। আবেদনের কিছু দিন পর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান আমার মুঠোফোনে ফোন করে বলেন, খারীজ বাতিল করতে হলে আমাকে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি বাধ্য হয়ে ৫হাজার টাকা দেয়। তিনি বাকি টাকা দাবি করলে আমি তার কাছে আকুতি মিনতি করি কাজটি করে দেওয়ার জন্য বাকি টাকা দিতে না পারায় আমাকে অফিস থেকে বের করে দেয় এবং বলেন যা ক্ষমতা আছে করেন। আমার মতো অনেকের সাথে এমন ব্যবহার করে আসছেন। আমি নিরুপায় হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্বরনাপন্ন হয়ে একটি অভিয়োগ দায়ের করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে আমি ওই ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের দৃষ্ঠান্ত মূলক শাস্তি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানায়।
সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা অভিযুক্ত মেহেদী হাসান বলেন, মোঃ মানিক হোসেন খারীজ বাতিলের আবেদন করেছিলেন। আমি তাঁর কাগজ পত্র দেখে সঠিক প্রতিবেদন ভূমি কর্মকর্তা কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা আদৌও সত্য নয়। আমি কোন টাকা পয়সা নেইনি বা কারা সাথেই খারাপ আচরণ করিনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা বলেন, সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ঘুষসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে তাকে শোকজ করা হয়েছে। ৭দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজন নাহলে তার বিরুধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, মোঃ মানিক হোসেনের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে সোনামুখী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান একটি প্রতিবেদনের জন্য ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। ভুক্তিভোগী প্রথমে তাকে ৫হাজার টাকা ঘুষ দেয় এবং বাকি ১৫ হাজার টাকা দিতে ভুক্তিভোগীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অভিযোগের পেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।