October 14, 2024, 6:30 am
শিরোনাম :
ছাতকে নামাজি শিশুদের  মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণ করলেন লতিফিয়া স্টুডেন্ট ও যুব ফোরাম বিশ্ব নবীকে নিয়ে কটুক্তি। মধুপুরে পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য স্বপন ফকির মেহেরপুরে পরিবেশক ঐক্যের বনভোজন অনুষ্ঠিত রাজশাহীর বাঘায় পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব শ্রী রথীন্দ্রনাথ দত্ত।  নড়াইল পহরডাঙ্গা বিএনপি মতবিনিময় সভা লোহাগড়া থানা কর্তৃক ১৩ (তের) জন আসামি গ্রেফতার শ্রীমঙ্গলে মহা অষ্ঠমীতে কুমারী পূজা, হাজারো দর্শণার্থীর ভিড় মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলায় এক হাজার তিনটি পূজামন্ডপে মহা সপ্তমী পূজা পালন হচ্ছে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো।রহিম বাদশার।দুর্গাপূজার উপহার সামগ্রী বিতরণ।

১০০ বছর ধরে চলছে চুনের মেলা, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।

মোঃ রাবিব আল আমিন বর্ষন,বিরামপুর দিনাজপুর,প্রতিনিধি:

বিরামপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের পাশে বন বিভাগের জঙ্গল। সেই জঙ্গলে দল বেঁধে প্রবেশ করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নারী-পুরুষ, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ লোকজনরা। তাঁদের কারও হাতে খাজা ও বাতাসার প্যাকেট। আবার কারও হাতে পলিথিনে মোড়ানো চুনের ছোট-বড় থলে। জঙ্গলের ভেতরে সবাই পাকুড় গাছের নিচে থাকা এক কিশোরের হাতে চুন তুলে দেন। বিরামপুর ঐতিহাসিক চুনের মেলায় দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়। ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোর মাটির উঁচু ঢিবির গায়ে দুই হাতে অনবরত চুন লেপে দিচ্ছে। ঢিবির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশু।
তাঁদের কেউ কেউ হাতে থাকা চুনের থলে ওই কিশোরের হাতে তুলে দিয়ে ঢিবির দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে প্রার্থনা করছেন। আবার কেউ হাতের ইশারায় প্রণয় করছেন। কৌতূহলী হয়ে এসব দেখছেন কেউ কেউ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে এমন দৃশ্য দেখা গেল দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সদদেরর দেবীপুর গ্রাম সংলগ্ন বন বিভাগের জঙ্গলে। জঙ্গলের উত্তরের সীমানা ঘেঁষে উপজেলার ৩ নম্বর খানপুর ইউনিয়নের প্রান্নাথপুর গ্রাম। আর দক্ষিণে পৌরসভার দেবীপুর গ্রাম। দুই গ্রামের মাঝে বন বিভাগের সামাজিক বন।
জঙ্গলের উঁচু ঢিবিতে স্থানীয় বাসিন্দা অনাহারি দেওয়ান নামের এক ব্যক্তির সমাধি। যা স্থানীয়ভাবে ‘পীরের মাজার’ হিসেবে পরিচিত। এই মাজারকে কেন্দ্র করে চুনের মেলা বসে। ঘটনাচক্রে প্রতিবছর বৈশাখ মাসে প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চুনের মেলা হয়। ১০০ বছর ধরে এই মেলা চলছে।

ওই সমাধিস্থল থেকে একটু দূরে জঙ্গলের মধ্যে ফাঁকা স্থানে গতকাল বিকেলে নিত্যানন্দ সরকার (৬৮), জগদীশ সরকার (৬৩) ও সুনীল সরকার (৭৫) নামের তিন দোকানি চুনের দোকান নিয়ে বসে ছিলেন। দোকান থেকে শত শত নারী-পুরুষ ২০ টাকা ও ৪০ টাকা দিয়ে পলিথিনের থলে ভরা চুন কিনে নিচ্ছেন। সেই চুন ‘পীরের’ সমাধিস্থলে থাকা কিশোর লুৎফর রহমানের হাতে তুলে দিচ্ছেন। লুৎফর রহমান সেই চুন সমাধির গায়ে দুই হাত দিয়ে লেপন করে দিচ্ছে। সমাধির পাশেই মেলায় দেখা গেল খেলনা, খাজা, বাতাসা, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, জিলাপি, প্রসাধনীসহ শতাধিক দোকান। এখানে আসা লোকজন বিশ্বাস করেন, ‘পীরের মাজারে চুন লেপন করলে মনের আশাপূর্ণ হবে।’
আলাপকালে গতকাল চুনের দোকানি নিত্যানন্দ সরকার বললেন, ‘চুনের এই ম্যালাত মুই ৪০ বছর ধরে চুনের দোকান দ্যাও। আগে তো বাপ ও বড় দাদা এ্যাটে চুনের দোকান দ্যাছোলো। বাপ-দাদা বাঁচে নাই। এখন মুই নিজেই দোকান দ্যাও। আজ বিকালে ১০ ধাড়া (৫০ কেজি) চুন আনিছুনু। এক মণ চুন বিক্রি হইচে।’

চুনের মেলাতে আসা দর্শনার্থীদের কেউ কেউ খাজা বা বাতাসা কিনছেন। পরে এসব সমাধির পাশে বসা বৃদ্ধ নারী মেহেরজানের হাতে তুলে দিচ্ছেন। তিনি সেগুলো দর্শনার্থীদের হাতে মুঠ ভরে বিলি করেন। আনাহারী দেওয়ানের দূর সম্পর্কের স্বজন হিসেবে পরিচিত মেহেরজান। তিনি প্রতিবছর চুনের মেলায় সমাধির পাশে বসে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সেবা করেন। চরকাই গ্রামের হাবিবুল ফকির বলেন, আমার দাদা মৃত সিরাজ উদ্দিন ফকির তার কাছ থেকে আমি শুনেছি আনছার আলী ফকির ওরফে অনাহারী দেওয়ান সে উক্ত স্থানে একটি কবরের মত ঘর করে পানি ভর্তি মাটির পাত্র নিয়ে সেখানে জীবন্ত অবস্থায় প্রবেশ করে আর ফিরে আসেনি।

মেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও আনছার আলী দেওয়ানের বংশের এক স্বজন শহিদুল ইসলাম চৌকিদার বলেন, প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলা বসে। আগে মাজারের পাশে মেলা বসত। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মাজার থেকে একটু দূরে ফাঁকা মাঠে এখন মেলা বসেছে। এ মেলা বৈশাখ মাসের আরও দুই বৃহস্পতিবার বসবে।
বিরামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, চুনের মেলার বিষয়ে মেলা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। তবে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে পুলিশ সহযোগিতা করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা