কাজী সামছুজ্জোহা মিলন মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ নওগাঁর মহাদেবপুরের সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শাকিলকে পুলিশ আটক করেছে। নওগাঁ সদর থানা পুলিশের সহযোগীতায় মহাদেবপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১০ টার দিকে মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ড মাছের মোড় জীবনের দোকানের কাছ থেকে তাকে আটক করে। মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাশমত আলী অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
ওসি জানান, সাঈদ হাসান তরফদার শাকিলের বিরম্নদ্ধে অস্ত্রবাজী, দখলবাজী, টেন্ডারবাজী, দলবাজী, নাশকতা প্রভৃতি অভিযোগ রয়েছে। এব্যাপারে যৌথবাহিনী কাজ করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি জানান, নওগাঁ সদর থানায় দায়ের করা জেলা বিএনপির অফিস ভাংচুর ও নাশকতা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শাকিলের গ্রেফতারের খবর দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এটা ট্যক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।
শাকিল সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তার গ্রেফতারের খবরে দলের অন্যান্য নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত হওয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার নির্ধারিত উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উপস্থিত হননি। এরা হলেন এনায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মিঞা, রাইগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান, খাজুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন, চাঁন্দাশ ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহমুদান নবী রিপন এবং চেরাগপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্রী শিবনাথ মিশ্র। গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান চৌধুরী দুলাল কাস্টিং ভোটের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পেলেও ইভিএম মেশিনের কারসাজিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাঈদ হাসান তরফদার শাকিলকে নির্বাচিত ঘোষণা করার পর থেকেই এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছিল। চেয়ারম্যান শাকিলের গ্রেফতারের খবরে তারা আনন্দ প্রকাশ করছেন।
অনেকেই যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। গ্রেফতারের খবরের সাথে নানান জনে নানান মন্তব্য করছেন। অনেকেই বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম নির্বাচিত হবার পর তার ছেলে সাকলাইন মাহমুদ রকি ও ভাগ্নে সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল এক ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তারা এলাকায় কাজ পাওয়া সব ঠিকাদারী কাজ নিজেদের আয়ত্বে নেওয়া, সময়মত কাজ শুরু না করেও অনেক প্রকল্পের বিল তুলে নেওয়া, ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ, প্রকল্পের কাজ ফেলে রাখা, সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অল্প দামে জমি, মার্কেট লিখে নেওয়া প্রভৃতি কাজে জড়িয়ে পড়েন।
এছাড়া সেসময় নিজেরাই পটকা ফুটিয়ে বোমা বিস্ফোরণের মিথ্যা মামলা দায়ের, বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করে তাদের আটক করানো প্রভৃতিরও অভিযোগ উঠছে। তাদের সিন্ডিকেটের খপ্পড়ে পড়ে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ আজও চালু হয়নি, জাহাঙ্গীরপুর সরকারি কলেজের ছয়তালা ভবন নির্মাণ, মহাদেবপুর থানার চারতলা ভবন নির্মাণ, মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রভৃতির কাজ থমকে রয়েছে। এলাকায় বালুমহাল নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষদের মারপিট, বিভিন্ন মামলায় জড়ানো, একের পর এক সাংবাদিকদের উপর হামলা করে হাত ভেঙ্গে দেওয়া, নিজেদের লোক দিয়ে সাংবাদিকদের উপর মিথ্যা মামলা করানো প্রভৃতি বিষয় নিয়ে জনমনে দারুণ ক্ষোভ রয়েছে। তাদের মামা-ভাগ্নে সিন্ডিকেটে পড়ে অনেকেই নাস্তানাবুদ হয়েছেন। স্থানীয়রা আটক চেয়ারম্যানের অন্য সঙ্গীদেরও গ্রেফতার দাবি করেন।###